ঢাকা      শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
শিরোনাম

নগরবাসীর আস্থা-বিশ্বাসই আমার কাজের শক্তি: মেয়র আতিক

IMG
13 May 2024, 9:02 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার প্রতি নগরবাসীর আস্থা-বিশ্বাসই কাজের শক্তি। ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাব। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে নগরবাসীকে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমি বদ্ধপরিকর। আজ সোমবার ডিএনসিসির নগর ভবনের হলরুমে মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, (দায়িত্বের) বাকি এক বছরে নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়নকাজ শেষ করা এবং খাল উদ্ধারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

মেয়র জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি চার বছরে নগরে অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। তবে এখনো অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবা সহজ করার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।

মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জলাবদ্ধতা নিরসন, অবৈধ দখলে থাকা খাল উদ্ধার, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, যানজট নিরসন, মশা নিধন, পরিবেশবান্ধব সড়কবাতি স্থাপন, পার্ক-খেলার মাঠ আধুনিকায়ন, ডিএনসিসি করোনা হাসপাতাল চালু, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নগরের উন্নয়নে সমঝোতা চুক্তিসহ জলাশয় রক্ষায় কাজ শুরু করেন তিনি।

মেয়ল বলেন, ‘সুস্থ ঢাকা প্রতিশ্রুতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করা, বর্জ্য অপসারণসহ ড্রেনের বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (বর্জ্য রাখার বড় ঘর) তৈরি করা হয়েছে।’

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প চলমান উল্লেখ করে মেয়র আতিকুল আরও বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন হবে। একই সঙ্গে ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রেডে যুক্ত হবে। গত সপ্তাহ থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মূল প্লান্ট নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছে।’

ডেঙ্গু নিধন প্রসঙ্গে মেয়র আতিক বলেন, ‘কভিডের সময় ৫৪টা ওয়ার্ডে দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। এখনো ক্যাম্পেইনের ওপর জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিটিআই আনতে গিয়ে ফেল করেছি এই কথাটা সত্যি নয়, আমরা এখন সরাসরি বিটিআই আনছি। নতুন সংযোজন টারবাইন মেশিন আনা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কীটতত্ত্ববিদ আনা হয়েছে। ডেঙ্গু নিধনে ডেঙ্গু আবাসস্থল কিনে নেওয়া হচ্ছে। যদি আমরা উদ্যোগ নিয়ে থেমে যেতাম তবে ব্যর্থতার কথা আসতে পারত।’

সংবাদ সম্মেলনে নগর উন্নয়নের নানান ফিরিস্তি তুলে ধরেন ডিএনসিসি মেয়র। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বছরে দুই লাখ গাছ রোপণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। গত বর্ষায় (জুন-অক্টোবর) ফুটপাত, মিডিয়া, পার্কসহ, অন্যান্য খোলা জায়গায় প্রায় ৯০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। অনেকেই হয়তো দেখে থাকবেন গাছগুলো বড় হচ্ছে। কিছু গাছ ডেমেজড হয়েছে। এই বর্ষায় আমরা সেটা রিপ্লেস করে দেব।’

পাশাপাশি ডেঙ্গু সচেতনতায় কাউন্সিলদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে (প্রতি কাউন্সিলরকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ) তিনি জানান, এলাকাভিত্তিক জনসংযোগ চলবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ অভিযানে চার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, ‘কিউলেক্স মশা নিধনে ডিএনসিসি এলাকার খাল ডোবা ও জলাধারের কচুরিপনা পরিষ্কার করা হয়েছে। বর্ষাকালে যত্রতত্র পরে থাকা বিভিন্ন ময়লা যেমন টায়ার, দইয়ের বাটি, আইস্ক্রিমের কাপ, কমোড, পলিথিন ইত্যাদি পরিত্যক্ত দ্রব্য নগদ টাকায় কিনে নেওয়া হচ্ছে। যাতে ডেঙ্গু মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে।’

ডিএনসিসির ২৪টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করে এ বছর সবগুলো পার্ক ও খেলার মাঠ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিরপুরের প্যারিস মাঠটি উদ্ধার করে দুই হাজার ২০০ ট্রাক বালু ফেলে ওই এলাকার শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন শত শত ছেলেমেয়ে সেখানে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি লাউতলা খালের পাড়ে অবৈধ মার্কেট ও ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে পার্ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুন মাসে ৪৬ হাজার ৮৯৯টি সড়ক বাতি লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনসিসি কাউন্সিলরদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে দেখা যায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাতি নষ্ট ছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা সেই সাড়ে তিন হাজার বাতি প্রতিস্থাপন করে দিয়েছি। এ ছাড়া দুই হাজার বাতি নিয়মিত মেইনটেন্যান্স রাখতে হচ্ছে। কোথাও বাতি নষ্ট হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। বাতিগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০ হাইড্রোলিক গাড়িও আমদানি করা হয়েছে।’

ওয়ান ওয়ে রোড সার্ভে শেষে সামনের মাসেই বনানীতে ওয়ান ওয়ে রোড চালু হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, গ্লোবাল রোড সেফটি এবং ওয়াল্ড রিসোর্চেস এ কাজটির জন্য সহযোগিতা করছে। এটি এ অঞ্চলে যানজট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

এছাড়া অনস্ট্রিট স্মার্ট পার্কিং রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রাথমিকভাবে গুলশানের আটটি রাস্তার ১৯৮টি অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে এই সেবা নেওয়া যায়। অ্যাপটি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার যানবাহন পার্ক করা হয়েছে।

এ সময় তিনি বৃক্ষরোপণ, মশক নিধনে বাফেলো টার্বাইন মেশিন, স্ট্রিট আর্ট, আট ঘণ্টায় কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণ, মেয়র’স কাপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের খালি জায়গায় খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেওয়া, ফুটওভার ব্রিজ, অনলাইন হোল্ডিং ডাটাবেইস, ক্যাশলেস মার্কেট, ক্লিনার্স পল্লী, ক্যাশলেস পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, সাততলা বস্তিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট, কবরস্থানের ডাটাবেইস তৈরি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, শিক্ষাবৃত্তি, ১৮টি ওয়ার্ডের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডিএনসিসির কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসানসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন