স্পোর্টস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: কে বলে টেস্ট ম্যাচের উত্তেজনা কমে গিয়েছে। ম্যানচেস্টারে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচের পঞ্চম দিনের তৃতীয় সেশনে দফায় দফায় চললো নাটক। ম্যাচে প্রথম চারদিনে কী হলো, না হলো সেই সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল পঞ্চম দিনের তৃতীয় সেশনের কয়েক মিনিটের ঘটনা।
এদিন দ্বিতীয় সেশন থেকে অনবদ্য লড়াই লড়লেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডের একের পর এক স্পিন বোলিং, জোফ্রা আর্চার এবং বেন স্টোকসের বাউন্সার সব সামলে দলকে নিয়ে গেলেন নিরাপদ জায়গায়। তারপর একপ্রকার ছেলেখেলা করলেন ইংলিশ বোলারদের নিয়ে। অবশেষে ড্র হলো টেস্ট ম্যাচ।
তৃতীয় সেশনে তখন জাদেজা এবং ওয়াশিংটন ব্যাট করছেন আশির ঘরে। সেই পরিস্থিতিতে হঠাৎ এগিয়ে এলেন বেন স্টোকস। আম্পায়ারের কাছে নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন, বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তারা আর খেলতে চান না, ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হোক। কিন্তু নাটকের তখনও বাকি ছিল। হ্যান্ডশেক করতে রাজি হলেন ক্রিজে থাকা দুই ভারতীয় ব্যাটার।
ক্রিকেটের নিয়ম বলছে, দুই দলের খেলোয়াড় সম্মতি দিলে তখন ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হবে। কিন্তু দুই ভারতীয় ব্যাটার তখন শতরানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তাদের সিদ্ধান্তে খুশি হননি একজন ইংলিশ ক্রিকেটারও। বেন স্টোকস এসে জাদেজাকে বলে গেলেন, আমি এবার হ্যারি ব্রুককে দিয়ে বল করাবো। তুমি কি ওর বলেই শতরান করতে চাও?’
ক্রলি এসে সোজা প্রশ্ন করে বসলেন, ‘হ্যান্ডশেক করলেন না কেন?’ কিন্তু দুই ব্যাটার নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। ইংলিশ অধিনায়ক এবার ফিল্ডিং সব সামনে রেখে বোলিংয়ে নিয়ে এলেন একদিকে ব্রুক অবং অন্যদিকে রুটকে। ধেয়ে এলো একের পর এক লুজ বল, একের পর এক ফুলটস।
দুই ভারতীয় ব্যাটার ইংলিশ বোলারদের পিটিয়ে শতরান পূর্ণ করলেন নিজেদের। তখন হাততালিতে ফেটে পড়ছে গোটা ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। নাটক চললো তারপরেও। দুই ব্যাটারের অনবদ্য লড়াইয়ের প্রশংসা তো নয়ই, ড্র হওয়ার পরে কোনরকমে হাত মিলিয়েই স্টোকস হাঁটা দিলেন উল্টোদিকে। তারপরও চললো কথোপকথন।
কমেন্টেটরদের কথায়, শেষ মুহূর্তের এই নাটক ভিত করে দিলো চারদিন পর থেকে শুরু হতে চলা ওভাল টেস্টের। এদিন অনবদ্য লড়াই লড়ে জাদেজা অপরাজিত ছিলেন ১০৭ রানে। ওয়াশিংটন সুন্দর করেন ১০১ রান। গোটা পাঁচটা সেশন বোলিং করে এবং শূন্য রানে ভারতের দুই উইকেট ফেলে দিয়েও ইংল্যান্ড মাত্র চার ভারতীয় ব্যাটারকেই ফেরাতে পারলো প্যাভিলিয়নে। শেষ সেশনে স্টোকসদের মধ্যে পরিষ্কার ধরা পড়লো ধৈর্য্যের অভাব। কোনও পরিকল্পনাই কাজ না করায় শেষে বিতর্ক তৈরি করেও লাভ হয়নি।
ভারত থামলো চার উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রানে। জাদেজা এবং ওয়াশিংটন পার্টনারশিপ গড়লেন ২০৩ রানের। শুভমান গিল এবং কে এল রাহুল আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের মনে যে সামান্য আশার প্রদীপ জ্বলেছিল, তা সহজেই নিভিয়ে দিলেন দু'জনে। লর্ডসে যে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল, এদিন ম্যাচ বাঁচিয়ে ভারত বুঝিয়ে দিলো এখনও সিরিজ ফুরিয়ে যায়নি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ০-২ হওয়ার পর দলের হাল ধরেছিলেন গিল এবং রাহুল। চতুর্থ দিন শেষে তাঁদের পার্টনারশিপই ম্যাচে রেখেছিল ভারতকে। সমর্থকরা আশা করেছিলেন রোববার তারা দিনের বেশিরভাগ সময়টা ব্যাট করে বাঁচিয়ে দেবেন ম্যাচ। কিন্তু দিনের শুরুটা ভালো করলেও স্টোকসের একটা বিষাক্ত বল পিচে পড়ে সোজা কে এল রাহুলের প্যাডে লাগে। তিনি আর ফিরেও তাকাননি, সোজা হাঁটা দেন ডাগ আউটের দিকে।
১০ রানের জন্য শতরান মিস করে কে এল রাহুল আউট হন ৯০ রানে। ঋষভ পন্থ ব্যাট করবেন কিনা জানা নেই। রাহুলের পর নামেন ওয়াশিংটন সুন্দর। অন্যদিকে ভালোই খেলছিলেন শুভমান গিল। পিচ অসমান বাউন্স থাকায় বেশ কয়েকবার বল এসে লাগে তাঁর বুড়ো আঙুলে। এক একটা বল ডিফেন্স করার পর পরিষ্কার তাঁর চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তবে তা নিয়েও শতরান করেন গিল।
১৯৯০ সালে শচীন টেন্ডুলকারের পর গিলই প্রথম ভারতীয় ব্যাটার যিনি ম্যানচেস্টারে শতরান করলেন। ৯০ থেকে ১০০ রানে পৌঁছতে তাঁর লেগে যায় ৩৬ বল। এই শতরানের সঙ্গে তিনি ছুঁয়ে ফেলেন ডন ব্র্যাডম্যান এবং সুনীল গাভাসকারকে।
একই টেস্ট সিরিজে সবথেকে বেশি শতরান করা অধিনায়কের তালিকায় লিজেন্ডদের ছুঁয়ে ফেললেন ভারতীয় দলের নতুন অধিনায়ক। তবে শতরানের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে টেকেননি তিনি। জোফ্রা আর্চারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে কিপার স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com
