শরীয়তপুর, বাংলাদেশ গ্লোবাল: কিশোর বয়সে বাবা–মাকে হারিয়েছিলেন আবুল কালাম। এরপর ভাই-বোনদের সংসারে বেড়ে ওঠেন। কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। পরিবারের প্রিয় মানুষটি মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে নিহত হন ওই যুবক। আবুল কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। তার এমন অকাল মৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজন ও গ্রামের মানুষরা।
ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে কালাম ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। ২০ বছর আগে তার বাবা ও মা মারা যান। এরপর তিনি বড় হন বড় ভাই ও বোনদের কাছে।
সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় যান কালাম। সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন। ওই কাজের জন্যই প্রতিদিন তিনি নারায়ণগঞ্জ–ঢাকা যাতায়াত করতেন।
প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে আসেন কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হন। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান আবুল কালাম। এরপর গণমাধ্যমের সংবাদে পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। কালামের মৃত্যুর খবরে শোকার্ত ঈশ্বরকাটি গ্রামের বাসিন্দারা। কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামে থাকা তার স্বজনরা। অনেকে ছুটে যান ঢাকায়।
ঘরে বসে কালামের ছবি হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বড় বোন সেলিনা বেগম বলছিলেন, ‘আমার ভাইটি সারা জীবন কষ্ট করেছে। কিশোর বয়সে বাবা–মাকে হারিয়েছে। আজ দুই শিশু সন্তান রেখে সে নিজেও না ফেরার দেশে চলে গেছে। এখন এই শিশু দু'টির কী অবস্থা হবে? কে তাদের পিতৃস্নেহ দেবে। তার বিধবা স্ত্রী কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে? আল্লাহ, তুমি আমার ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে এমন কেন করলা।’
কালামের বড় ভাই খোকন চোকদার গ্রামের বাড়িতে থাকেন। পারিবারিক জমি-জমা দেখাশোনা করেন। পারিবারিক সেসব জমি-জমা ও ফসলাদির খোঁজ নেওয়ার জন্য গত মাসে কালাম গ্রামের বাড়িতে আসেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে কাজ সেরে আবার ঢাকায় ফিরে যান। খোকন চোকদার বলেন, ‘ওটাই যে আমার ভাইয়ের শেষযাত্রা হবে, আমি বুঝতে পারিনি। এখন সে ফিরবে প্রাণহীন দেহ নিয়ে। আমরা স্বজনরা অপেক্ষায় আছি তার প্রাণহীন দেহটার জন্য। আমাদের পরিবারের সঙ্গে কেন এমন হলো। আমার ভাইটি তো কারও কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন অকালে তাকে প্রাণ হারাতে হলো। তার স্ত্রী–সন্তানকেইবা এখন কে দেখবে?’
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com