আহমাদুল কবির, কুয়ালালামপুর : মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও রাজনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে বিএনপির নতুন ও প্রাথমিক সদস্যপদ নিবন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে। গত ২ নভেম্বর, মালয়েশিয়া সময় রাত ৮টায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় কুয়ালালামপুরের অভিজাত জি-টাওয়ারের একটি সুসজ্জিত হলরুমে। প্রবাসী নেতা-কর্মীদের ঢল নামে সেখানে। বিভিন্ন রাজ্য শাখা, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শতাধিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক মিলনমেলায়।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের দল, জনগণের শক্তিতেই বিএনপি পুনর্গঠিত হবে। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা দলের রক্তস্রোতের মতো—তাদের আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম আমাদের আন্দোলনের প্রাণশক্তি।
তিনি আরও বলেন, এই সদস্যপদ নিবন্ধন শুধু কাগুজে কার্যক্রম নয়, এটি দলের ভিত মজবুত করার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। প্রতিটি নিবন্ধিত সদস্যই হবে ভবিষ্যৎ আন্দোলনের সৈনিক।”
তারেক রহমান প্রবাসী নেতাদের উদ্দেশে আহ্বান জানান—সংগঠনকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, নীতিনিষ্ঠ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। এজন্য প্রবাসীদেরও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশ নিতে হবে।
অনুষ্টানে অংশ নেয়া মালয়েশিয়া বিএনপির প্রতিষ্টাতা সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সহ সভাপতি তালহা মাহমুদ বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। আজ প্রবাসীদের রাজনৈতিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের দিন।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া অধ্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দলের আদর্শে অবিচল। সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে।
অনুষ্টানে উপস্থিত নেতারা বলেন, প্রবাসে থেকেও আমরা দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারি। সংগঠনভিত্তিক সদস্যপদ আমাদের অবস্থানকে প্রাতিষ্ঠানিক করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, দীর্ঘদিন পর তারা একটি সুসংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগের অংশ হতে পেরে গর্বিত। অনেকে বলেন, দলের এই ডিজিটাল রূপান্তর প্রবাসীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
অনুষ্টানে অংশ নেয়া বুকিত বিনতাং শাখা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন সেলিম বলেন, এর আগে সদস্যপদ ছিল কাগজনির্ভর। এখন অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে আমরা দ্রুত ও সহজে যুক্ত হতে পারছি। এটি প্রবাসীদের জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।
অন্যদিকে মালয়েশিয়া ছাত্র দলের এক সদস্য বলেন, আমরা তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিতে বিশ্বাসী। বিএনপি ডিজিটালভাবে সদস্য সংগ্রহ শুরু করায় আমাদের মতো তরুণদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে।
উদ্বোধনের আগে জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
সবার কণ্ঠে ছিল স্লোগান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেক প্রবাসী কর্মী। কেউ কেউ জানান, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে দূর প্রবাসে থেকেও তাদের মন প্রতিনিয়ত দেশে পড়ে থাকে।
নতুন ও প্রাথমিক সদস্যপদ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিএনপি এবার ব্যবহার করছে আধুনিক ডিজিটাল ডাটাবেজ সিস্টেম। দলীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে প্রবাসী সদস্যদের নাম, যোগাযোগের তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে। এতে ভুয়া বা পুনরাবৃত্ত সদস্যপদের সম্ভাবনা থাকবে না।
মালয়েশিয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারন সম্পাদক প্রার্থী মির্জা সালাহ উদ্দিন জানান, আমরা সদস্যদের তথ্য অনলাইন সার্ভারে যুক্ত করছি, যা লন্ডন সেন্ট্রাল অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এর ফলে প্রত্যেক প্রবাসী সদস্য বিশ্বব্যাপী বিএনপি নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে যাবেন।
তিনি আরও জানান, মাসব্যাপী এই নিবন্ধন কর্মসূচি চলবে এবং প্রতিটি রাজ্য শাখা পর্যায়ক্রমে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে মালয়েশিয়ায় বিএনপির কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে সংগঠনটির কুয়ালালামপুর, সেলাঙ্গর, পেনাং, জহর, মালাক্কাসহ কয়কটি রাজ্য শাখা রয়েছে।
দলটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শ্রমজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন—যার বড় অংশ বিএনপির সমর্থক বলে দাবি করেন দলীয় নেতারা।
তারেক রহমান তার বক্তব্যের শেষাংশে প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন আনতে হলে প্রবাসীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীরা শুধু অর্থনৈতিক রেমিট্যান্স পাঠান না, তারা দেশের ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক সচেতনতারও প্রতিনিধি।
তিনি সবাইকে আহ্বান জানান—দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে বিদেশি প্রভাবশালী মহলের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে। আপনারা যে দেশে আছেন, সেখানকার বন্ধু, সহকর্মী ও সমাজে বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরুন। গণতন্ত্রের সংগ্রাম শুধু দেশের ভেতরে নয়, প্রবাসেও চলমান।
দলীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি: “ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, আদর্শভিত্তিক বিএনপি গড়তে হবে”। অনুষ্ঠানে বক্তারা জোর দেন দলীয় ঐক্যের ওপর। এক যুবদল নেতা বলেন, আজ আমরা যে সদস্যপদ কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুমাত্র নাম লেখানোর বিষয় নয়—এটি একটি সংগঠন পুনর্গঠনের সূচনা।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে। আগামী দিনে প্রবাসীদের ঐক্য ও ত্যাগ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে আগামী ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সম্মেলনে নতুন সদস্যদের মধ্যে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে এবং প্রতিটি রাজ্য শাখা থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এখন অনলাইন মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বিএনপির এই নতুন সদস্যপদ নিবন্ধন কর্মসূচি সেই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন।
এই উদ্যোগ শুধু দলীয় সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা নয়—এটি বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের এক প্রতীকী সূচনা।
বহু প্রবাসী কর্মী ও শিক্ষার্থী মনে করছেন, এই ডিজিটাল সদস্যপদ কর্মসূচি বিএনপিকে আবারও সংগঠিত করে তুলবে, আর প্রবাসীদের কণ্ঠকে দেশের গণতান্ত্রিক অঙ্গনে আরও প্রভাবশালী করে তুলবে।
আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে—এভাবেই শেষ হয় মালয়েশিয়া বিএনপির প্রাণবন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com