ঢাকা      মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
শিরোনাম

চলে গেলেন কিংবদন্তি বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র

IMG
11 November 2025, 10:14 AM

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: চলে গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের কালজয়ী নায়ক ধর্মেন্দ্র। আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। ছয় দশকের রাজত্বে তিনশোরও বেশি ছবি করেছেন বলিউড অভিনেতা। ভারতের পাঞ্জাবের মানসপুত্রের প্রয়াণে শেষ হলো এক সোনালি যুগ।

কিংবদন্তি বলিউড তারকার জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার নসরালি গ্রামে। এক সাধারণ পরিবারের ছেলে থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটি মানুষের হৃদয়ের নায়ক। ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি ছিল গভীর ভালবাসা। কলেজে পড়াকালীন জয় করেন ফিল্মফেয়ার ট্যালেন্ট হান্ট। আর সেই জয়ই তাকে নিয়ে আসে মুম্বাই— শুরু হয় সাফল্যের যাত্রা।

১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’-র মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন ধর্মেন্দ্র। তারপর একে একে ‘ফুল অউর পাত্থর (১৯৬৬), ‘অনুপমা’, ‘বন্দিনী’, ‘আয়ে দিন বাহার কে’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘শোলে’, ‘দোস্ত’, ‘জুগনু’— একের পর এক ছবিতে তিনি যেন নিজের প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন।

ধর্মেন্দ্রর সুদর্শন চেহারাই যেন তাকে কয়েক যোজন এগিয়ে রেখেছিল তার সমসাময়িকদের থেকে। বিশেষ করে ‘শোলে ’ ছবির বীরু চরিত্র তাকে অমর করে রেখেছে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। অনায়াস হাসি থেকে প্রেমাতুর চাউনি আর নায়কোচিত সংলা— তাকে গোটা এক প্রজন্মের কাছে ‘হিরো’ করে তোলে।

অ্যাকশন হিরো হিসেবে ধর্মেন্দ্র ছিলেনও তুলনাহীন। কিন্তু রোমান্টিক চরিত্রেও তার অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছিল। ‘চুপকে চুপকে’ বা ‘গুড্ডি’র মতো ছবিতে শুধু নায়ক থেকে অভিনেতা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন অবলীলায়।

তবে শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও তিনি বেঁচে ছিলেন নায়কের মতোই। সাধারণ মানুষের কথা থেকে কৃষকের দুঃখ— সবই ছুঁয়ে যেত তার অন্তর। অভিনেতা থেকে নেতা হয়ে জনসেবার ইচ্ছা পূরণ করতে আসেন রাজনীতির আঙিনায়।

২০০৪ সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে রাজস্থানের বিকানের থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতি, খ্যাতি, সাফল্য— কোনও কিছুই তার বিনয়ী স্বভাবকে বদলাতে পারেনি।

ছবির মতোই ধর্মেন্দ্র ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল ঘটনার ঘনঘটা। সেখানে প্রেমের আনাগোনা অবিরত। ১৯৫৪ সালে স্ত্রী প্রকাশ কউরের সঙ্গে প্রথমে সংসার সাজিয়েছিলেন নায়ক। তদের দুই পুত্র— সানি দেওল এবং ববি দেওল। বাবার মতোই বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন।

কিন্তু সেই সংসারেও চিড় ধরে এক সময়। পরবর্তীতে তিনি বলিউডের ‘ড্রিম গার্ল’, বয়সে ১২ বছরের হেমা মালিনীর প্রেমে পড়েন নায়ক। ধর্ম পরিবর্তন করে ১৯৮০ সালে তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা— ইশা দেওল এবং অহনা দেওল। হাজারও বিতর্ক পেরিয়ে দুই স্ত্রীর প্রতি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন অভিনেতা। সমালোচনা-কটাক্ষকে তুড়িতে উড়িয়েছেন।

ছয় থেকে নয়ের দশক পর্যন্ত ধর্মেন্দ্রর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তাকে বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি বলিউডে পরিচিত ছিলেন ‘হি-ম্যান’ নামে। আদ্যোপান্ত ‘মশালাদার’ বাণিজ্যিক ছবিকে তিনি এমন সহজাত দক্ষতায় সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন যে, মানুষ তার অভিনয়ে খুঁজে পেত নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি।

শহর হোক বা গ্রাম, ধনী হোক বা সাধারণ মানুষ— ধর্মেন্দ্র ছিলেন সকলের আপনজন। সেই সময় রিকশার পিছনের পোস্টার থেকে শুরু করে অষ্টাদশীর বইয়ের পাতার ফাঁকেও জায়গা ছিল তারই ছবির। যেন ধর্মেন্দ্র শুধু পর্দার নায়ক নন, সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক আবেগ, এক মুগ্ধতা।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন যেমন জয় করেছেন, তেমনই পুরস্কার পেয়েছেন অগণিত। ১৯৯১ সালে ‘ঘায়েল’-এর সুবাদে আসে জাতীয় পুরস্কার। ২০২১ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য। ২০১২ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে।

নব্বইয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে ধর্মেন্দ্রর শরীর নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও ভক্তরা তার মনের সজীবতায় মুগ্ধ ছিলেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নায়ক থেকে পরিণত হয়েছেন চরিত্রাভিনেতায়— আর সেখানেও নিজস্ব ছাপ রেখে গিয়েছেন অচিরে।

প্রতিটি চরিত্রেই তিনি যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছেন, প্রমাণ করেছেন— সত্যিকারের শিল্পীর বয়স হয় না, শুধু রূপ বদলায়। ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া’, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘আপনে’, ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’-র মতো ছবিগুলি তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

প্রকৃতির নিয়মে এক যুগের অবসান হলো আজ। তারপরপ আগামীর জন্য রয়ে গেল মৃত্যঞ্জয়ী আলো। ধর্মেন্দ্র অমর হয়ে থাকবেন। স্মৃতিতে, শিল্পে।

ব্রেকিং নিউজ, এই মুহূর্তের খবর, প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর, লেটেস্ট নিউজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন