ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল : জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ—গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটাই করছে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আদেশের কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা চিহ্নিত করেছে দলটি। এনসিপি বলছে, নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) জুলাই সনদ, নাকি নোট অব ডিসেন্টবিহীন জুলাই সনদ, এ বিষয়ে আদেশে অস্পষ্টতা রয়েছে। এটিসহ আরও কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতার কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে দলটি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছে এনসিপি। রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারি করেন।
এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, যার ফলে এই সনদ আসলে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।...ক্ষমতাবানেরা তাঁদের মতো করে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তেমন একটা ভাষ্যে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। সরকারের কাছে অবিলম্বে এই আদেশের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের কোন কোন জায়গায় অস্পষ্টতা দেখছে এনসিপি, তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন আখতার হোসেন। আদেশে গণভোটের প্রশ্ন ক-তে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া—এই কথার মধ্যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এটা কি নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ, নাকি নোট অব ডিসেন্টের কার্যকারিতাবিহীন জুলাই সনদ? যেসব পক্ষ নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ এবং এই গণভোটের ফলাফলকে দেখতে চায়, তারা যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, সে ক্ষেত্রে এই কথাটাকে ভুলভাবে বা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করছে এনসিপি।
গণভোটের প্রশ্নের মধ্যেই ‘অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হলেও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আসলে কোনগুলো, তার সঠিক সংজ্ঞায়ন আদেশে নেই বলে উল্লেখ করেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ‘অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে কি থাকবে না, সে বিষয়ে আদেশে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এছাড়া সংসদের উচ্চ কক্ষে অন্তত ১০ শতাংশ নারী প্রতিনিধি মনোনীত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিলেও এ বিষয়টি আদেশের তালিকা প্রকাশের অংশে উল্লেখ করা হয়নি।
আখতার হোসেন বলেন, গণভোট নিয়ে প্রশ্নের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদি গণভোটের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়, তাহলে কেন আদেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের মতামত অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হলো, সে প্রশ্নও তোলেন এনসিপির এই নেতা।
তিনি বলেন, আদেশে জুলাই সনদের সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সেগুলোর মধ্যে গুরুত্ব-অগুরুত্বের বিচার তৈরি করে এটার আংশিক বাস্তবায়ন এবং বিষয়টি আংশিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে ছেড়ে দেওয়া—এমন ধরনের একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
আগামী সংসদ (সংবিধান সংস্কার পরিষদ) ১৮০ দিনের মধ্যে সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে অপারগ, ব্যর্থ বা অনিচ্ছুক হলে সেই প্রস্তাবগুলোর ফলাফল কী হবে, সেগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে কি হবে না, গৃহীত হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আদেশে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে—এ বিষয়টা জুলাই সনদ ও গণভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আপত্তি নেই। কিন্তু এর আওতা যদি জুলাই সনদ এবং গণভোটের থেকেও বেশি হয়ে যায়, তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ পেতে পারে। এখানে একটা অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
ব্রেকিং নিউজ, এই মুহূর্তের খবর, প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর, লেটেস্ট নিউজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন www.bangladeshglobal.com