ঢাকা      বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
শিরোনাম

আমরা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি, একটা দোলাচল চলছে: মির্জা ফখরুল

IMG
19 November 2025, 4:17 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল : দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সামনে হলেও এটি কোনো শেষ লক্ষ্য নয়; বরং দেশকে গণতন্ত্রে ফেরানোটাই, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। এতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। একটা দোলাচল চলছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে। এখনো শিডিউল হয়নি। হবে আশা করছি। নির্বাচন কিন্তু সব শেষ নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা ডেমোক্রেসিতে ফিরে যাওয়া এবং ডেমোক্রেটিক কালচার গড়ে তোলা—এটাই সবচেয়ে বড় অভাব।’

মির্জা ফখরুল মনে করেন, টেকসই রাষ্ট্র গড়তে হলে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে।

গত ১৬ বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হওয়া দমন–পীড়ন, গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপি একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তিনি জানেন না, পৃথিবীর কোনো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এই রকম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গেছে কি না? ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ২০ হাজারের মতো নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এগুলো ইতিহাসে আনতে হবে, ডকুমেন্টে আনতে হবে। এসব ঘটনা গবেষণার মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকে সংস্কারের কথা বলা হয় জোরেশোরে। অথচ তারা আগেই সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। সংস্কারের দাবিকে কেউ ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে উপস্থাপন করলে তা হবে সংকীর্ণতা।

বিএনপি বিপ্লবী দল নয়, বরং লিবারেল ডেমোক্র্যাট হিসেবে সব ধর্ম-বর্ণ-মতের মানুষকে নিয়ে ‘রেইনবো স্টেট’ গঠনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থান পুরোপুরি পরিষ্কার—‘উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে একদিকে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে মবক্রেসি ভায়োলেন্স চলছে। এটা কিসের আলামত, তা তিনি জানেন না। তিনি মনে করেন, এই রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশেষ মহল বিশ্বদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করে। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। কোনো মহল সচেতনতার সঙ্গে, অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে এটা করার চেষ্টা করছে কি না, দেখা উচিত। কোনো মহল বিভক্তি সৃষ্টি করছে কি না, তা দেখা উচিত।

গণতন্ত্রের বাস্তব চর্চার অভাবকে দেশের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথাটা হচ্ছে, ‘আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো।’ দুর্ভাগ্যক্রমে এখানে অনেকে অন্যের মতকে সহ্য করতে চান না।

গণতন্ত্রের পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানের কথা স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট্ট বিবৃতিতেই দল ও জাতির জন্য পথনির্দেশনা আছে—‘প্রতিশোধ নয় প্রতিহিংসা নয়, আসুন আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে সবাই একযোগে কাজ করি।’ বিদেশে থাকা তারেক রহমানও গণতন্ত্রের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখছেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জিয়া পরিষদ নেতা অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের সম্পাদক বাবুল তালুকদার। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রেকিং নিউজ, এই মুহূর্তের খবর, প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর, লেটেস্ট নিউজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন www.bangladeshglobal.com

এ বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন