স্পোর্টস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: বিশ্বকাপ জয়ের উদ্যাপন শেষে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি-রদ্রিগো ডি পলরা। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টটা ছিল বেশ সহজ র্যাঙ্কিংয়ে ৫৯ ধাপ পিছিয়ে থাকা পানামার বিপক্ষে। অনুমিত ছিল, ঘরের মাঠে এমন প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে ম্যাচের প্রথম ৭৭ মিনিটে তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেনি আলবিসেলেস্তিরা।
ম্যাচের শেষদিকে অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে মেসির দল। ৭৮ মিনিটে তিয়াগো আলমদার গোলে লিড পায় আর্জেন্টিনা। ৮৯ মিনিটে ফ্রি কিক পেলে মেসির আবারও বাঁ-পায়ে সেই বাঁকানো ফ্রি-কিক। যার মাধ্যমে তিনি ক্যারিয়ারের ৮০০তম গোলের অনবদ্য রেকর্ডবুকে নাম উঠিয়েছেন। একইসঙ্গে আর্জেন্টাইনদের ভাসিয়েছেন বাধভাঙা জয়ের উচ্ছ্বাসে। আর তাতে জয় দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
এল মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে শুক্রবার (২৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে পানামার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
ঘরের মাঠে শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনা। বল দখল থেকে শুরু করে গোলে শট সব জায়গায়ই পানামার চেয়ে ঢের এগিয়ে ছিল আর্জেন্টাইনরা। তবে ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় শুধু মিলছিল না গোল।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই স্বাগতিকদের লিড এনে দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন রদ্রিগো ডি পল। কিন্তু গোলবারের সামনে থেকে পানামার ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করায় তিনি শট নেয়ার সুযোগই পাননি। পরের মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম অন টার্গেট শট নেন লিওনেল মেসি। তবে তার শটটি গ্লাভসবন্দি করে নিতে অসুবিধা হয়নি পানামা গোলরক্ষক হোসে গেরার।
নবম মিনিটে মেসির শট ডিফেন্ডারদের বাধায় লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ পায়নি। ১৫ মিনিটে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে হোসে মুরিলো ও কেভিন গালভান দুপাশ থেকে একই সময়ে মেসিকে ট্যাকল করলে ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি। ফ্রি-কিক নিতে আসেন মেসি নিজেই। প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে তার নেয়া শট কাছের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
২৩তম মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে প্রথম শট নেয় পানামা। তবে সেটি ছিল না লক্ষ্য বরাবর। পরের মিনিটে গোলবারের সামনে বল পেয়েও হোসে গেরার বাধায় জালে জড়াতে ব্যর্থ হন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ৬ মিনিট পর অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার জোরালো শট যায় বারের ওপর দিয়ে।
৩৭ মিনিটে দলকে লিড এনে দেয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। তবে ডি-বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেলেও পানামার এক ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে শট নিতে ব্যর্থ হন তিনি। ৪৩ মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে তিনি আরও একবার ব্যর্থ হন লক্ষ্যভেদ করতে। পরের মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন এনজো ফার্নান্দেজ। তার দুর্দান্ত শট ডান প্রান্তে ঝাপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন হোসে গেরা। তাতে প্রথমার্ধ শেষে গোলশূন্য ড্রতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় মেসিদের।
৭৮ মিনিটে মেসির বাঁকানো ফ্রি কিক পানামার পোস্টে লেগে ফিরলে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ভলি করতে গিয়ে পারেননি। পাশেই দাঁড়ানো থিয়াগো আলমাদা বাঁ পায়ের শটে গোল করেন। প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটেও ফ্রি কিক থেকে বল পোস্টে মারেন মেসি। তাঁর কিছুক্ষণ আগেই আঘাত পান ডান পায়ে। পানামার কেভিন গ্যালভিনের ট্যাকলে মেসির হাঁটু ছিলে যায়। রক্ত ঝরছিল।
প্রথমার্ধে মেসি ও দি মারিয়াকে নিয়ে ডান পাশ দিয়ে বেশির ভাগ আক্রমণ করেছে আর্জেন্টিনা। ৪৪ মিনিটে দুরপাল্লার শটে পানামা গোলকিপার গুয়েরার পরীক্ষা নেন এনজো ফার্নান্দেজ। ৫২ মিনিটে মেসির আরেকটি ফ্রি কিক দারুণভাবে ঠেকান গুয়েরা। কিন্তু ৮৯ মিনিটে গিয়ে পারেননি। এবার মেসির বাঁকানো শট ঠিকই ঢুকে পড়ে জালে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির ৯৯তম গোল আর ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৮০০তম! বার্সেলোনার জার্সিতে ৬৭২ গোল তাঁর। পিএসজির হয়ে ২৯।
কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে নামানো একাদশই এ ম্যাচে খেলান স্কালোনি। সমর্থকদের যেন সেই ম্যাচের নির্যাস পাইয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পানামা বেরসিক দল। ফ্রান্সের মতো প্রাণপণ লড়াই করতে না পারুক, আর্জেন্টিনার পোস্টে একটি শটও রাখতে না পারাটা বেরসিক খেলা ছাড়া আর কী! মেসিরা ৭৪ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৯টি শট নিয়ে সবগুলোই পোস্টে রেখেছেন। বিরতির পর গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছে আর্জেন্টিনা। উৎসবের মেজাজে থাকায় হয়তো রুচি হয়নি। ফার্নান্দেজ, দি মারিয়ারা তাই দু-একটি সুযোগ মিস করছেন, বলাই যায়!
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই উৎসবে পানামা-কেকটা দুই পোঁচে কেটে অনুষ্ঠানের শেষ অংশে চলে যায় আর্জেন্টাইনরা। আরাধ্য সেই বিশ্বকাপ ট্রফি ম্যাচ শুরুর আগেই মাঠে রাখা হয়েছিল। জয়ের পর আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার উপস্থিতিতে ট্রফিটা মাঠে নিয়ে আসা হয়। দি পল-ম্যাক অ্যালিস্টাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ ও মেসিকে মাঝে রেখে অভিবাদন জানান সর্বকালের অন্যতম এই সেরাকে।
মেসিও তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা অর্জনের পাশে দাঁড়িয়ে ধন্যবাদ জানান সমর্থকদের, ‘এই তুমুল সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। (বিশ্বকাপ ট্রফি দেখিয়ে) আমরা এটার জন্য যা যা করা সম্ভব, সবই করেছি।’
আর্জেন্টাইনদের চেয়ে তা ভালো জানে কে! মনুমেন্তাল যেন মেসির কথায় সায় দিতেই আরেকবার গর্জে উঠল!
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এইচএম
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com