জামালপুর, বাংলাদেশ গ্লোবাল: জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার তিন দিন পর ২২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে বকশীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে।
এর আগে এদিন সকালে মূল অভিযুক্ত বাবুকে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কনক কুমার দাস বাবুকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে এখনও গ্রেফতার হয়নি হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া চেয়ারম্যানের ছেলে। নাদিম হত্যায় চেয়ারম্যান বাবুসহ এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তবে বাবু ছাড়া অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি। গ্রেফতার অন্য ১০ জন চেয়ারম্যান বাবুর অনুসারী বলে জানা গেছে।
নাদিম হত্যার ঘটনায় মাহমুদুল আলম বাবুকে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইলের যৌথ স্বাক্ষরে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় অভিযুক্ত বাবুকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে উপস্থিত হয়ে ৭ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতেও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ বাজার থেকে নিলক্ষীয়ায় বাড়ি ফিরছিলেন বাংলানিউজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি নাদিম। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করেন।
পরদিন (১৫ জুন) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাদিম।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলার বকশীগঞ্জের নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নাদিমের। বেলা সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে নাদিমের মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে সারা দেশের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।
সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় নাদিমের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। তার জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালেরবাতি গ্রামের মৃত শাহেদুল হক মাস্টারের ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ করায় প্রাণ দিতে হয়েছে নাদিমকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া নাদিমের সবশেষ পোস্টও তাদের এ অভিযোগকেই সমর্থন করে।
ওই পোস্টে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার তথ্য জানান নাদিম। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘বকশীগঞ্জের ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বাবু চেয়ারম্যানের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা খারিজ করেছেন আদালত। সত্য সত্যই।’
এদিকে নিহতের স্ত্রী মনিরা বেগম অভিযোগ করেছেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে সংবাদ করেন আমার স্বামী। এরপর তার লোকজন আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আমি এর বিচার চাই।’
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহীন আল আমিনও নাদিমের পরিবারের অভিযোগকেই সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিক নাদিমকে প্রাণ দিতে হলো। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নাদিমের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও আটক করা হবে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে বকশিগঞ্জ পৌর এলাকায় নাদিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ।
পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী ও উপস্থিত জনসাধারণকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং মতবিনিময় করেন।
পরে পুলিশ সুপার সাংবাদিক নাদিমের বাড়িতে যান এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি সাময়িক ব্যয় নির্বাহের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা দেন।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এইচএম
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com