ঢাকা      সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
শিরোনাম

সশস্ত্র প্রতিরোধের পরিকল্পনা ছিল শামিনদের: সিটিটিসি প্রধান

IMG
24 June 2023, 9:23 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মূল ব্যক্তি শামিন মাহফুজ এবং তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর তারা জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণ নয়, মূলত সশস্ত্র প্রতিরোধের পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশাবাদী কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে জঙ্গি শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার ওরফে আরিফ ওরফে আসলাম ওরফে মেন্ডিং ও তার স্ত্রী নাজনীনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ঢাবিতে থাকার সময় থেকেই শামিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কুকি চিনের প্রধান নাথান বম। শামিন উদ্দেশ্যমূলকভাবেই নাথান বমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ঘনিষ্ঠতা করেন। তখনই নাথান বমের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে যান শামিন। ২০১৯ সালে নাথান বমকে জঙ্গি সংগঠন তৈরির কথাটি জানালে সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতের জন্য তাকে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন প্রস্তাব দেন। ২০২০ সালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বসে কুকি চিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠন শারক্বীয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক হয়। আমরা শামিনের কাছ থেকে হাতে লেখা দুই পৃষ্ঠার স্মারকটি উদ্ধার করতে পেরেছি। সেখানে কুকি চিন কর্তৃক জঙ্গি সংগঠনটিকে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। তখন থেকেই কুকি চিনের আওতায় তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।

এসময় সাংবাদিকরা নাথান বমের সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা নাথান বমের সঙ্গে শামিনের সর্বশেষ যোগাযোগটা উদঘাটন করতে পারিনি। আমরা মনে করি কোনো না কোনোভাবে তার যোগাযোগ থাকতে পারে। হিজরতে যাওয়া অধিকাংশকেই আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে। নাথান বমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন শামিন। তার কথায় কেন নাথান বম আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এই প্রশ্নগুলো আমাদেরও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাব, এর ভিত্তিতে বিস্তারিত জানা যাবে। আশা করছি, তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে।

আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা শামিনের মোবাইল থেকে একটি গোপন কথোপকথন উদ্ধার করেছি। সেখানে শূরা কমিটির সঙ্গে নাথান বমও কানেকটেড ছিলেন। অভিযানের শুরুর দিকে শামিন মাহফুজকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন নাথান বম। কিন্তু শামিন আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নাকচ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। শামিন নির্দেশনা দেন, ‘যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক, রক্ষণাত্মক নয়।’ নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদ করা। তাদের মতে যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যারা কাজ করে তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই মূল উদ্দেশ্য। তবে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত হতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত থাকবে।

সিটিটিসি প্রধান শামিন মাহফুজের স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, শামিন মাহফুজের স্ত্রী ছিলেন আনসার আল ইসলামের ইজাজ কারগিলের স্ত্রী। তার স্ত্রীর আগের স্বামী কারগিল যুদ্ধে ড্রোন হামলায় মারা যান। তখন সংগঠনের সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন শামিন। তার স্ত্রীও সংগঠনের নারী সদস্য হিসেবে নারীদের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০২১ সালে সিলেট থেকে ছয় তরুণ নিখোঁজ হয়। এপ্রিলে প্রথম ১২ জন নিয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। কুকি চিনের ক্যাম্পের পাশেই কেডিসি ক্যাম্প নামে ক্যাম্পটি পরিচালিত হয়। তখনই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ৩০ এর বেশি তরুণ নিখোঁজ হয়। তখনই আমরা এ সংগঠনের তৎপরতার বিষয়ে অবগত হই। রক্সি গ্রেফতারের পর মূল ব্যক্তি হিসেবে তমালকে আমির হিসেবে নিয়োগ দেন শামিন। ২০২২ সালে শূরা কমিটি গঠন করে বিভিন্নজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সিটিটিসি প্রধান আরও জানান, শামিন মাহফুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি ঢাবি থেকে বের হয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখান থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন। এই গবেষণার বিষয় ছিল পাহাড়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। শামিন মাহফুজ ২০১১ সালে বিজিবির হাতে গ্রেফতার হন। আবারও ২০১৪ সালে গ্রেফতার হন। পরে কাশিমপুর কারাগারে থাকাকালীন নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রথম পরিকল্পনা করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় আটক হুজি এবং জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্ব সাইদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসেন। তখন রক্সিও জেলখানায় ছিলেন। সে সময় জঙ্গি নেতারা জানতেন শামিন মাহফুজ এবং রক্সি আগেই জেল থেকে বের হবেন। তাই তাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির। ২০১৭ সালে রক্সি এবং ২০১৮ সালে শামিন মাহফুজ জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান। এরপর থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন, কিন্তু সংগঠনের নামকরণ হয়নি। তবে তারা একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকেন। রক্সি দাওয়াতি কার্যক্রম এবং শামিন মাহফুজ পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। ২০১৯ সালে রক্সিকে সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

শামিন মাহফুজ এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম ও এইচএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে সপ্তম স্থান অর্জন করেন। এরপর রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর অন্য একটি কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসি পাস করে ঢাবিতে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশোনা করার সময় আনসার আল ইসলামের এক বড় ভাইয়ের ছেলের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৭ সাল থেকেই শামিন মাহফুজ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দিন রহমানীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসেন বলেও জানায় সিটিটিসি।

বাংলাদেশ গ্লোবাল/এমএস

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন