ঢাকা      শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

মেয়েকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ অবন্তিকার মায়ের

IMG
16 March 2024, 11:48 AM

নিউজ ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: 'এটাই বুঝি আমার প্রাপ্য ছিল। আমি এখন সন্তানহারা। এর বিচার কার কাছে দেব? আজকে আল্লাহ আমার এত বড় ক্ষতি করল?’ এভাবেই আহাজারি করছেন শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই নিজের কষ্ট প্রকাশ করেন তিনি।


কিছুদিন আগে স্বামী হারানো তাহমিনা শবনমের আহাজারি থামছেই না। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনের মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।

তাহমিনা শবনম বলেন, ‘হায় রে অবন্তিকা তুই আমারে কত বলছিলি মা একটা জিডি করো, মা একটা জিডি করো। আমি বলেছি মা এগুলা করব না। আল্লায় বিচার করবে। আমার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ছিল। শেষে আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোকেই নিয়ে গেল!

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। পরে তাকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছে। অবন্তিকা এসে বলেছে মা ওরা তো আমাকে মেন্টাল টর্চার করছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে অবন্তিকার পরীক্ষা চলতেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবন্তিকাকে টর্চার করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে ।

অবন্তিকার আত্মহত্যার জন্য তার সহপাঠী রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি, আঁখি, বন্যা ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন তাহমিনা শবনম।

অবন্তিকার মায়ের অভিযোগ, ‘তারা আমাকে পুলিশ দিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। শুনেছি ওই পুলিশ তাদের এলাকার ভাই। পরে আমি ডিআইজিকে ফোন দিয়েছি। উনি বলেছেন, ভাবী আপনি আমাকে বলতেন আমি ব্যবস্থা নিতাম। এক পর্যায়ে দেখলাম বিষয়টি ইউনিভার্সিটিতে মোটামুটি রফাদফা হয়েছে। তারপরও আমি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ১০টা নাম দিয়েছি। চেয়ারম্যান আমার সামনেই প্রক্টরকে ফোন দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। প্রক্টর কী ব্যবস্থা নিল?’

তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার বাবা হাসপাতালে থাকার সময় তারা মেয়েটাকে বিভিন্ন কথা বলে মানসিক টর্চার করতো। তারা বলতো ‘তোর বাবার কাছে যাস নাই? ‘তোর বাবা হাসপাতালে আর তুই প্রোগ্রাম করিস?’ এভাবে মেয়েটাকে মেন্টাল টর্চারে রেখেছিল তারা। এরপর তার বাবা মারা যাওয়ার পর তারা অবন্তিকাকে দেখলে বলতো, ‘বাবা নাই মানসিক সমস্যা হচ্ছে না? ‘আহারে বাবাটা মরে গেল, মানসিক সমস্যা হচ্ছে? এই টর্চারের কী বিচার চাইব? কার কাছে চাইব?’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামের এক সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী অবন্তিকা। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।

মৃত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকিকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও এই ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। শুক্রবার মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ আশ্বাস দেন।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন