ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বাধাহীনভাবে ও সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলেন জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় এফবিসিসিআই’র মতিঝিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ’বিজনেস রিলেটেড ব্যারিয়ার্স অ্যান্ড পসিবল ওয়ে-আউট’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টর ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশ।
সেমিনারে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেন সহজে ব্যবসা করতে পারে সেই প্রক্রিয়া সহজীকরণে কাজ করছে সরকার। যে কোন ব্যবসা উদ্যোগকে সফল ও প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের দায়িত্ব। ব্যবসায়ীদের মার্কেট এক্সেসের সুযোগ তৈরিতেও সরকার কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশে শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। এ জন্য এফবিসিসিআই সহ বেসরকারি খাতের সকল অংশীজন, গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা এবং একাডেমিশিয়ানদের সাথে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বেসরকারি খাতের বলিষ্ঠ অবদানের প্রশংসা করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তারা সাহস করে ঝুঁকি না নিলে বাংলাদেশে এত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ছিলো না। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (4IR) সহ আগামীর চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলায় বিজনেস প্রোসেস রি-ইঞ্জিনিয়াংয়ের ওপর জোর দেন তিনি।
শিল্পের উন্নয়নে খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, দক্ষিণ এশিয়া এবং আসিয়ান দেশ-সমূহের বিজনেস হাব হিসেবে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন ১৭০ মিলিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে এই দেশকে বিশ্বের নবম বৃহৎ ভোক্তা বাজার হিসেবে পরিণত করবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বহুবিধ শুল্ক ও অশুল্ক বাধার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবসা স্থাপনে ও সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে বিদ্যমান রেগুলেটরি বিষয় সমূহ, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, সনদ প্রাপ্তি ও নবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, শুল্কায়ন জটিলতা, সর্বোপরি অস্থিতিশীল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বৈশ্বিক নেতিবাচক পরিস্থিতির ফলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
এমন পরিস্থিতিতে, বিষয়গুলো নিয়ে সরকার, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা, ও একাডেমিয়াসহ সব অংশীজনকে সাথে নিয়ে একই প্ল্যাটফর্মে আলোচনা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহবুবুল আলম।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া জানান, দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিডা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৮ টি এজেন্সির ১৫০ বেশি সেবা এক ছাতার নিচে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জ্যানওসকি। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে এখানে জার্মান থেকে বিনিয়োগ আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তার প্রবন্ধে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সনদ প্রাপ্তি এবং নবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা দ্রুত হ্রাসের পরামর্শ দেয়া হয়। প্রতি বছর সনদ নবায়নের জটিলতা দূর করতে- তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে সনদ প্রদানের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমাতে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার ওপর গুরুত্ব দেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সাবেক কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা ব্যবসায় রেগুলেটরি বাধা, ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আইআরসি), এমপ্লয়ি রিটেনশন ক্রেডিট (ইআরসি) ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলো চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সেগুলো সমাধানের আহ্বান জানান।
এর আগে জিআইজেড বাংলাদেশ এর ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর ওয়ের্নার ল্যাঞ্জ বলেন, বাংলাদেশের শিল্প কারখানার যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের শিল্প কারখানা আরও বিকশিত হবে।
সেমিনারে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী। ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে সরকারের সাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এসময় এফবিসিসিআই, সিপিডি, এবং জিআইজেড এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষ্যরিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মো. মুনির হোসেন, পরিচালকবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যরা।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com