ঢাকা      মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২
শিরোনাম

ইসরাইলের কাছে কতো পারমাণবিক বোমা রয়েছে?

IMG
23 June 2025, 8:32 AM

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই যে ইসরাইলের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, সেটি কারোরই অজানা নয়। যদিও দেশটিকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করতে দেখা যায়নি। বরং ইরান "পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি রয়েছে" দাবি করে সপ্তাহখানেক আগে দেশটির ওপর হামলা শুরু করেছে ইসরাইল।

জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় দেশ দু'টির মধ্যে সংঘাত ক্রমেই আরও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। "মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলই একমাত্র দেশ, যার কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে," বিবিসি মুন্ডোকে বলেছেন শান্তি ও নিরাপত্তা বিষষক স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞানী জেভিয়ার বোহিগাস।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত মার্চ মাসে জানিয়েছিল যে, ইরান এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। "পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে হলে এটি ৯০ শতাংশের ওপরে অর্জন করতে হবে," বলেন বোহিগাস।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরানসহ অন্যান্য দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করলেও ইসরাইল এখন পর্যন্ত সই করেনি। ফলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মতো একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আইএইএ-কে তাদের সম্ভাব্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে দিতে তারা বাধ্য নয়।

যদিও ইসরাইল নিজে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার একজন সদস্য। যেহেতু দেশটি পরিদর্শনের অনুমতি দেয় না, সে কারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে খুব একটা তথ্যও পাওয়া যায় না।

যতোটুকু তথ্য জানা যায়, সেগুলো মূলত ফাঁস হওয়া তথ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন এবং পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। এছাড়াও ইসরাইলের সাবেক পরমাণু প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনু'র সাক্ষাৎকার থেকেও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

এক সময় ইসরাইলি পারমাণবিক কেন্দ্রে কর্মরত ভানুনু-কে গত শতাব্দীর আশির দশকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। ওই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই ভানুনু তখন বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন যে, ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এই তথ্য প্রকাশ করার জন্য তাকে অনেক বছর জেলও খাটতে হয়েছে।

পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হলেও ইসরাইলের নেতারা নিজ মুখে কখনও সেটি স্বীকার করেননি, আবার অস্বীকারও করতে দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে তারা বরং অস্পষ্টতা রাখার নীতি মেনে চলেন। পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে ইসরাইলের সরকারের এই নীতিকে বলা হয় "আমিমুত", যার অর্থ দাঁড়ায় "ইচ্ছাকৃত অস্পষ্টতা"।

"ইসরাইলের পারমাণবিক যুগে এই নীতিটি সম্ভবত তাদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র ব্যাপার," যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যাভনার কোহেন।

যদিও ইসরাইলের ইতিহাসে এই নীতি মোটেও নতুন কিছু নয়। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ তার আত্মজীবনীতেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। "অস্পষ্টতার শক্তি যে কতো প্রচণ্ড, সেটি আমরা শিখেছি...যারা দ্বিতীয়বার হলোকস্ট করতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্য এই অস্পষ্টতা বা সন্দেহ একটি শক্তিশালী প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে," লিখেছেন পেরেজ।

অধ্যাপক কোহেনও তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে অস্বচ্ছতার এই নীতি ইসরাইলের "সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলগত এবং কূটনৈতিক অর্জন"।

"ইসরাইল তার নিজের পছন্দেই অস্পষ্টতার নীতি গ্রহণ করেছে এবং সেটা হয়েছে। যেহেতু দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করেনি, সে কারণে তাদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শন করতে দেওয়ারও প্রয়োজন নেই," বিবিসি মুন্ডোকে বলেন ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক জেভিয়ার বোহিগাস। তিনি আরও বলেন, সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেশই সবকিছু স্পষ্ট করতে চায় না। তবে পারমাণবিক ইস্যুতে ইসরাইল "আরও বেশি অস্পষ্টতা" বজায় রাখে।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন