ঢাকা      সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২
শিরোনাম

তিনজন এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে, হোটেলে মিললো লাশ

IMG
30 June 2025, 9:16 AM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: সৌদি আরব প্রবাসী মনির হোসেন গত ঈদুল আজহার আগে দেশে আসেন। চার-পাঁচ দিন পরই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু যাওয়ার আগে ১৮ বছর বয়সী অসুস্থ ছেলে নাঈম হোসেনের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় আসেন। গত শনিবার লক্ষ্মীপুর থেকে স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও ছেলেকে নিয়ে মগবাজার মোড় সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেল থেকে গতকাল রোববার মনির দম্পতি ও তাদের ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই পরিবারের এই তিনজনের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের।

পুলিশ বলছে, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে হোটেল কক্ষে নিয়ে খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। ওই খাবার কিনে দিয়েছিলেন মনির হোসেনের ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম। তাকে ও তার মেয়েকে রমনা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

স্বজনরা জানান, মনিরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে। ৩০ বছর আগে তিনি সৌদি আরবে যান। সেখানে ঠিকাদারি করতেন। দেশেও রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে মার্কেটসহ রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে নাঈম জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেজো ও ছোট ছেলেকে বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে রেখে ঢাকায় আসেন তারা।

মনিরের তিন ভাইও প্রবাসে থাকেন। তাঁর কেরানীগঞ্জে আট বছর আগে তৈরি করা বহুতল ভবন রয়েছে। সেখানকার ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এগুলোই দেখাশোনা করেন রফিকুল।

মনিরের ফুফাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রতি বছর একবার মনির দেশে আসতেন। মাসখানেক থাকার পর ফিরে যেতেন। এবার ঈদুল আজহার আগে তিনি দেশে আসেন। চার-পাঁচ দিন পর ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর অসুস্থ ছেলেকে ইস্কাটন এলাকার একজন চিকিৎসকের কাছে দেখাতেন। যেহেতু তিনি সৌদি চলে যাবেন, তাই শনিবার গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রীসহ ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। ওই দিন চিকিৎসকের কাছে সিরিয়াল না পেয়ে তারা হোটেলে ওঠেন।

তিনি আরও জানান, খাবার খাওয়ার পর তিনজনের মৃত্যু রহস্যজনক। কেউ পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে বিষজাতীয় কিছু খাইয়ে তাদের হত্যা করতে পারে। মনির এলাকায় দানশীল এবং গরিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত।

সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলটির সহকারী ম্যানেজার আনারুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মনির হোসেন ও তাঁর কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম হোটেলে আসেন। রফিকুলের নামে ১০৩ নম্বর কক্ষটি ভাড়া নেন। এরপর তারা চলে যান। আনুমানিক ১০-১২ মিনিট পর মনির, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আসেন। সঙ্গে কেয়ারটেকারও ছিলেন। রাতে রফিকুল বাইরের রেস্তোরাঁ থেকে তাদের খাবার কিনে আনেন। তবে রফিকুল রাতে কখন চলে যান, বলতে পারেন না বলে জানান তিনি।

আনারুল ইসলাম বলেন, সকালে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে হোটেলে আসেন। এরপর সকাল ১১টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় মনিরের স্ত্রী স্বপ্নাকে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন জানতে পারি, হোটেল কক্ষে তারা অসুস্থ হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে ফিরে এসে অসুস্থ অবস্থায় মনিরকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর মনিরের ছেলেকে অচেতন অবস্থায় ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, কক্ষটি একদিনের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। তবে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রফিকুলের মেয়ে বলেন, আরও একদিন কক্ষটি ভাড়া নেওয়া হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, স্বপ্না ও তাঁর ছেলেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। মনিরকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আলমগীর হোসেন বলেন, মনিরকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন কোনো রকম তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল। তবে নড়াচড়া করছিলেন না। দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। এর কয়েক মিনিট পরই তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ, আবাসিক হোটেলের কর্মচারী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেয়ারটেকার রফিকুল স্বজন ও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গতকাল সকালে মনির তাঁকে ফোন করে জানান, স্ত্রী, সন্তান ও তিনি রাতে খাবার খাওয়ার পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাতে সবাই বমি করেছেন। এরপরই রফিকুল কেরানীগঞ্জ থেকে হোটেলে আসেন এবং ফার্মেসি থেকে বমির ওষুধ কিনে দেন। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।

মরদেহ আদ্-দ্বীন হাসপাতালে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিট হাসপাতাল ও হোটেল কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, খাবার খেয়ে শনিবার রাতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোববার তাদের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের আগে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই কক্ষে কারা যাতায়াত করেছে, তা দেখা হচ্ছে।

এদিকে, একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের দেহলা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা মনিরের গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন