ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিলাম ডেমোক্রেসির জন্য। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সারাদেশে মবক্রেসির রাজত্ব হচ্ছে। চেয়েছিলাম ডেমোক্রোসি, হয়ে যাচ্ছে মবক্রেসি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস পাচ্ছে, তারা কারা? এবং কেন? এই ‘দুই কেন’র জবাব হচ্ছে সরকারের নির্লিপ্ততা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্লিপ্ততায় সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে’ এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা সহকারে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং থানা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়া পল্টনে জড়ো হন।
বিকাল পৌনে ৫টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করে যুবদল। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে, বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয কার্যালযের সামনে ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নয়া পল্টন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে শাহবাগে জড়ো হন। এ সময় সেখানে আধা ঘন্টার মতো অবস্থান করেন। এতে শাহবাগের আশেপাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজকে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে পরিকল্পিতভাবে ইস্যু সৃষ্টি করে, সেই ইস্যুর মধ্য দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দল বিএনপিকে কলঙ্কিত করার একটি অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারা ফ্যাসিবাদের আগমন চায়, যারা দেশে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন চায়, পুনর্বাসন চায়- সেই প্রশ্নের জবাব আমরা দিতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কায়দার যারা ইস্যু সৃষ্টি করছে, সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল ও বিলম্বিত করবার জন্য যারা চেষ্টা করছে, তারা যেনো আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায়। যেনো জনগণের মনে কোন প্রশ্নের উদ্বেগ না হয় যে, সরকার বোধ হয় একটি নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করিনি ফ্যাসিবাদী পতিত শক্তি গোপালগঞ্জে হোক আর যেখানেই হোক, গণঅভ্যুত্থানের শক্তির উপর হামলা করার সাহস পাবে। কিন্তু কেনো? এই কেনোর জবাব হচ্ছে, যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল সংগঠিত করেছে- যাদের এখনো নিবন্ধন নাই, তারা অনেক আবেগতাড়িত হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে এমন সব রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে- সেই রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি হামলা করছে। যেভাবে আমরা এনসিপির কর্মসূচির ধরন দেখছি, তাতে করে একটা বার্তা পাচ্ছি- কোন না কোন বাহানায় এমন কোন অবস্থা সৃষ্টি করা, যাতে করে বলতে পারে এই সরকার কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এই সরকার নির্বাচন কিভাবে দেবে?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যারা বলছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, কিন্তু সরকারের তো আপনারাও (এনসিপি) অংশ। দেশের মানুষ সবই জানে। আপনাদের দু’জন উপদেষ্টা সেই সরকারে বসে আছেন। দু’দিন পরে আপনাদের সঙ্গে তারা যোগদান করবেন। তারপরে আপনাদের সঙ্গে নির্বাচন করবে। এই দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’
এনসিপির সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কিছু প্রশ্ন আপনারা ইতিমধ্যেই তুলেছেন। বলছেন, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। কেন? শাপলা প্রতীক না দিলেই কি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যায়? জাতীয় প্রতীকের মার্কা ছাড়া বাংলাদেশে কি আর কোনো মার্কা ছিল না? এই প্রশ্ন তো আমরাও তুলতে পারি।’
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে ধানের শীষও তো সেই জাতীয় প্রতীকে আছে। কিন্তু ধানের শীষের মার্কা নির্বাচন কমিশনের তফসিলে আছে। ১৯৭৮ সালের আগে সেই মার্কা সেখানে বিদ্যমান ছিল। এই মার্কা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তাই রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানকালে রাজনৈতিক ইতিহাস চর্চা করে তারপর বক্তব্য রাখা উচিত।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির সুযোগ পেলে পতিত ফ্যাসিবাদ আবার বিজয়ী হবে উলেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে যাতে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় সবাই যাতে একই রাস্তায় এগিয়ে যেতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করছেন, (নির্বাচনের) প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এখনো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো নির্দেশনা দেননি। আশা করবো, জনগণকে আশ্বস্ত করবেন। অতি শিগগির নির্বাচন কমিশনকে সেই নির্দেশনা দেবেন।’
যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েলের সঞ্চালনায় মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল, সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com