ঢাকা      মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

নববর্ষে ঢাবিতে শ্লীলতাহানির ৯ বছর, সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে বিচার

IMG
14 April 2024, 10:35 AM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল : আজ থেকে ৯ বছর আগে ২০১৫ সালে নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে গত ৯ বছরে ওই মামলার বিচার শেষ হয়নি। নানা আইনি মারপ্যাঁচে মামলার বিচার কার্যক্রম ঝুলে আছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য একাধিক বার দিন ধার্য হলেও তা হয়নি। তবে, মামলার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সাক্ষী বাদ যাওয়ায় পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। এ মামলাটি বর্তমানে ঢাকার আট নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলায় নয়জনের সাক্ষী নেওয়ার পর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য গত ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। সেদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ১৩ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামলার রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৫ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণে নতুন দিন ধার্য করেন।

৯ বছর আগে এই দিনে বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলায় কয়েক জন পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিতে না আসায় তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারি করা হবে। তাদের সাক্ষ্য শেষে দ্রুতসময়ের মধ্যে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই ট্রাইব্যুনালের পিপি মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

জানা যায়, ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের ঘোষণাও করা হয়েছিল। মামলার সাত আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পরের বছর কামাল নামে জনৈক এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই। পরের বছরের জুন মাসে আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেনি। তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, চলতি বছর মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে। ২০১৫ সালের ওই ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে পুলিশ প্রশাসন।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

পরের বছর ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক জনৈক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৯ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে মামলাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ পড়ায় আমরা রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে আবার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করি। আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটির পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

অভিযোগ গঠনের প্রায় ৬ বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলাটি যেহেতু রায়ের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল সেখান থেকে আবার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য এসেছে। ধরে নিতে হবে মামলাটি গুরুত্ব সহকারে বিচার কাজ চলছে। তিনি বলেন, সাক্ষী যদি যথাসময়ে আসে মামলাটি দ্রুত শেষ করা উচিত। ভাইটাল সাক্ষী হলে সব সাক্ষীর আর দরকার হবে না। সে ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি।


বাংলাদেশ গ্লোবাল /এইচএম

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন