ঢাকা      শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২
শিরোনাম

৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি: আবির্ভূত বাস্তববাদী জিয়াউর রহমান

IMG
07 November 2025, 2:57 AM

শায়রুল কবির খান

১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশ এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।

ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল ৩ নভেম্বর এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে পেশাদার ও চৌকস সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে। ফলে দেশের সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সৈনিকদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিচক্ষণতার সঙ্গে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা পরবর্তীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে মর্যাদার আসন লাভ করে।

বিগত ১৭ বছর ধরে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরকে বিতর্কিত করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ সত্য আবারও জেগে উঠেছে—সিপাহী-জনতার পাশে বিপ্লব ও সংহতির চেতনা হিসেবে। শেখ হাসিনা সরকার ইতিহাস থেকে ৭ নভেম্বরকে চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

সর্বশেষ ২০১০ সালে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণতন্ত্রের মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এরপর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার আর কখনও ৭ নভেম্বর তারিখে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি।

২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশেই তিনি সর্বশেষ জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

সত্যিই-ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। সে কারণেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৭ নভেম্বরের চেতনা আবারও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে জনতার মাঝে।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস—এই দুটি শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সত্তা। এর প্রেক্ষাপটেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে আবির্ভূত হন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” নামে পরিচিত। ৭ নভেম্বরের চেতনা সেই জাতীয়তাবাদের পরিপূরক।

দেশবাসী সেদিন জিয়াউর রহমানের হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। সিপাহী-জনতা ৭ নভেম্বর স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্তকারীদের খপ্পর থেকে দেশকে উদ্ধার করে ২৫ বছরের গোলামী চুক্তিকে নিকুচি করে দেয়।

ফলে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজের স্থান করে নেয়। সেই সময় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ (গুটিকয় বৈদেশিক অনুচর ছাড়া) এবং সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা নিয়ে দেশ উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তির পথে এগিয়ে যায়। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী, দেশবিরোধী সকল অচিন্তনীয় আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলা পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়- ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটেছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা।’

সেই ৭ নভেম্বর ছিল শুক্রবার। ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে- ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জাতির উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান- ‘সশস্ত্র বাহিনী দেশবাসীর পাশে আছে, আপনারা ধৈর্য ধরুন, মহান আল্লাহ আমাদের সহায়।’

সেদিন রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে এসেছিল রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাংকের নলে পরিয়ে দিয়েছিল ফুলের মালা। বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে ভেসে এসেছিল ফুলের সুবাস। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাঁক বদলের তিনটি বড় গণঅভ্যুত্থানেই দৃশ্যত দেশের কল্যাণে বিএনপি এগিয়ে এসেছে।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেও আবারও দেশের কল্যাণে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাঈদ ইফতেখার বলেন, ‘দুটি গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক শূন্যতার সুবিধা পেয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে নেতিবাচক শক্তি হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে, এবং সেই সুযোগ বিএনপি কাজে লাগিয়েছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন, ‘জনবিদ্রোহ বা জনরোষের ফলে যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তার রাজনৈতিক ফসল ঘরে তুলেছে বিএনপি।’

ফ্যাসিস্ট সরকার একজন জনবিপ্লবীকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু বিপ্লবকে হত্যা করতে পারে না।সত্যিই তাই-বিপ্লব চিরঞ্জীব। আজকের বাস্তবতায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ইতিহাস তাই অমোচনীয় ও অনস্বীকার্য।প্রতিষ্ঠিত হবে আগামীর ‘সোনালি বাংলাদেশ’, ‘৩১ দফা-এর ভিত্তিতে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী


সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

এ বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন